পীরকে আমরা মানবো কেন পীড়ার কারণ হলে
যার সাহায্য নিচ্ছেন তিনি
তার বিরুদ্ধেই বোঝান যিনি
এমন হলে বলবে সবাই
মানবো কেন দোয়া-দাওয়াই
যখন, নিজের প্রয়োজনে পড়েন বিজ্ঞানেতে ঢলে
আপনি কি অবাক হচ্ছেন লেখাটা পড়ে? অথবা রেগে যাচ্ছেন? যাই করুন, সঙ্গে একটু ভাবুন। বিশেষ করে, আপনি যদি শিক্ষিত মুসলিম ছাত্র-যুব হন।
ভাবুন, আমরা যাদেরকে সমাজের, বিশেষ করে ধর্মীয় জীবনের পরিচালক ও পরামর্শদাতা করে রেখেছি, তারা কি আমাদের সঠিক পথ দেখাচ্ছেন? যদি না দেখান তবে তাদের আমরা মানব কেন? ভাবার সময় এসেছে। অনুগ্রহ করে ভাবুন।
একবার নিচের ভিডিওটি দেখুন। এরা কারা? শিক্ষাদীক্ষাহীন অসহায় গরিব বা নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ। বিপদে পড়লে, যারা হাতের কাছে পান সেই মানুষকে, যিনি নিজেকে প্রকৃত ধার্মিক ও আল্লাওয়ালা বলে দাবি করেন। তাই তার কাছেই ছুটে যান পরামর্শ নিতে। এই বিপদে তাদের কি করা উচিত তা জানতে। কিন্তু দুঃখের হলেও এটা জলের মত পরিষ্কার যে, এই অসহায়তার সুযোগ নেন কিছু বকধার্মিক। এখানে পীর হচ্ছেন তিনিই।
তিনি (পীর) রোগাক্রান্ত হলেই ভক্তের কষ্টার্জিত পয়সায় (নজরানা) চলে যান বড় বড় ডাক্তারের কাছে। আর একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ যখন কোনো উপায় না পেয়ে ওনার কাছে যান, পয়সার বিনিময়ে মাথায় ফু দিয়ে, পানিপড়া কিংবা তাবিজ দিয়ে তাকে আল্লাকে ডাকতে বলে দায় সেরে ফেলেন। তিনি কি জানেন না, ইসলাম ধর্মে এই কাজগুলো কে নিষিদ্ধ করা আছে? এবং এতে আদেও কিছু হয় না?
দুটো উত্তর হতে পারে এর। জানেন অথবা জানেন না। যদি জানেন, তবে তিনি অপরাধী। যদি না জানেন, তবে তিনি অজ্ঞ এবং অপরাধী। কোনোটাকেই মানা যায় না। তাই এটা (এই কবিতা) আমার প্রতিবাদ।
এর পরও আপনি প্রশ্ন করবেন কেন লিখলাম এমন কবিতা? করতেই পারেন। সে অধিকার আপনার আছে। তাহলে আমিও আপনাকে প্রশ্ন করতে পারি, আপনাকে মানুষকে বিপথে পরিচালনার অধিকার কে দিয়েছে? যে মানুষগুলো আজ এই ভয়ংকর মহামারীর সময় কোনো দিশা না পেয়ে মসজিদে গিয়ে আল্লার কাছে সাহায্য প্রার্থনায় জমায়েত হওয়ার চেষ্টা করলো, আপনি কেন তাদের বোঝালেন না, যে এভাবে রোগমুক্তি সম্ভব নয়! কেনো বোঝালেন না, রোগ ভোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং সবচেয়ে জরুরী চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্য নেওয়া। কেন আপনি তাদের জানাননি, আল্লা বলেছেন,
১) 'তুমি ইচ্ছে করে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।'
আজকে যারা জমায়েত হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও মসজিদে জমায়েত করলো, তারা কি ইচ্ছে করেই নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিলো না? এটা কী ধরণের ধর্ম পালন? আর এটাকে যদি আপনি উৎসাহিত করেন, আপনি অপরাধী নন?
২) 'তোমার যতটুকু সামর্থ্য আছে, তুমি ততটুকুই আমাকে ভর করো।'
এর কী অর্থ আপনি বোঝেন না? আমি মনে হয় আপনি বোঝেন। কিন্তু কাউকে বোঝাবেন না। এটাকে (আপনাদের ভাষায়) মহাপাপ বলে। আমি বলি অন্যায়।
৩) আপনিই বলে থাকেন, কোরআন হচ্ছে আল্লার বানী। তাকে উপেক্ষা করা মহাপাপ। তাহলে কেন আপনি তাদেরকে বললেন না, কোরআনের এই নির্দেশ, যেখানে তিনি বলেছেন, 'সাধ্যাতীত কোনো বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার খোদা কিন্তু আমি নই।'
কেন বলেননি আমরা জানি, আপনার ব্যবসার ক্ষতি হবে।
৪) 'তোমাদের জন্য যেটা সহজ সেটা আমি চাই, যেটা কঠিন ও জটিল সেটা আমি চাইনা।'
আপনি জানেন না, আজ এই পরিস্থিতিতে জমায়েত হওয়াটা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ? তাহলে কেন মসজিদে জামাতের অনুমতি দিলেন?
আপনি হাদীস জানেন না? যেখানে নবীজির পরামর্শ আছে :
১) তোমার ওপর তোমার শরীরের অধিকার আছে।
অর্থাৎ (লক্ষ্য করুন, তিনি একথা বলেন নি, যে তোমার শরীরের ওপর তোমার অধিকার আছে। তাই তুমি তোমার শরীরকে যা খুশি তাই করতে পারো।) তোমার শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী তোমাকে তার সুরক্ষার দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে। এটা তোমার ওপর তোমার শরীরের অধিকার।
২) নবীজি বলেছেন, কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে যেন সুস্থ ব্যক্তির সাথে না রাখা হয়। আর আপনি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারবেন, জমায়েত হওয়া কোন মানুষ সুস্থ আর কে সুস্থ নয়? তাহলে কীভাবে আপনি এই জামাতের অনুমতি দিলেন? দিলেন নিজের মাতব্বরি জাহির করতে এবং ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে।
৩) আপনি তাদের বোঝাতে পারতেন না, নবীজিকে উদ্ধৃত করে, যেখানে তিনি বলেছেন, 'যদি কোনো ব্যক্তি মহামারীতে আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধরে ঘরে অপেক্ষা করে, তবে তাকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হবে।' এটা কি মানুষকে নিজের ঘরে আড়াল করে রাখার কথা বলছে না? এটাই কি চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিধান না? আপনি বলেন নি। কারণ.... আমরা সবাই বুঝতে পারছি।
৪) এই হাদিসের কথা আপনি কীভাবে ভুলে গেলেন? যেখানে তিনি এক মরু ঝড়ের দিনে তার অনুগামীদের জানাচ্ছেন, 'আজ তোমরা যার যার অবস্থানে অবস্থান করে জুম্মার নামাজ আদায় করো। মসজিদে আসার দরকার নেই।'
আমরা জানি এসব। আপনিও জানেন হয় তো, অথবা জানেন না। আগেই বলেছি, যেটাই হোক না কেন, আপনি অন্যায় করেছেন। সেটা আমার কাছে নয়, ওই অসহায় ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে।
অনুগ্রহ করে এসব বন্ধ করুন। আপনার যারা আমার এই পোস্ট পড়ছেন, তাদের কাছে আমার অনুরোধ, মুখখুলুল। এই অসহায় মানুষজনের পাশে দাঁড়ান। তাদেরকে বিজ্ঞানের আলোয় আনার চেষ্টা করুন। অনুগ্রহ করুন আমাকে, পাশে দাঁড়ান ওদের। এটা আপনার (শিক্ষিত মানুষ) সামাজিক দায়িত্ব।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন